তৈলাক্ত ত্বক নিয়ে আমাদের অভিযোগের যেন শেষ নেই! মুখ বেশি তেলতেলে দেখায়, প্রচুর পরিমানে ঘাম হয় বা মেকআপ করলেই কিছুক্ষণ পর কালচে ভাব হয়ে যায়, বার বার মুখ ধুয়ে নিতে হয়,ব্রণে সারা মুখ ভরে যায়, এমন আরও কত কি সমস্যা! কিন্তু, একটু জেনে বুঝে যদি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট নির্বাচন করেন আর পরিপূর্নভাবে ত্বকের যত্ন নিতে পারেন, তাহলে অয়েলি স্কিন নিয়ে আপনার কোনো আক্ষেপ থাকবে না। কেন স্কিন তেলতেলে ভাব হয়, কোন কোন পণ্যসমূহ আপনার ত্বকের জন্য ভালো, কিভাবে যত্ন নিলে স্কিন প্রবলেমগুলো বেশ কমিয়ে আনা যায়, এই বিষয়গুলো আপনাকে আগে বুঝতে হবে। আশা করছি, এই আর্টিকেল থেকে আপনার অয়েলি স্কিনের জন্য একটা পরিপূর্ণ সমাধান পেয়ে যাবেন। চলুন তাহলে জেনে নেই, তৈলাক্ত ত্বকের বেসিক স্কিন কেয়ার সম্পর্কে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকের কারণ হচ্ছে জেনেটিক ও হরমোনাল ইমব্যালেন্স। এছাড়া আবহাওয়াগত কারণ ও ডায়েটের কারণ এটি নির্ভর করে থাকে। শরীরে যদি তেল উৎপাদনকারি হরমোন বেশি একটিভ থাকে, সেক্ষেত্রে স্কিনে অতিরিক্ত সেবাম উৎপন্ন হয়। টেস্টোস্টেরন হরমোনের (Testosterone hormone) প্রভাবে বয়ঃসন্ধিকালে সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড (Sebastian Gland) বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। রূপচর্চার কিছু ভুলও স্কিনের তৈলাক্তভাব বাড়িয়ে দেয়। ওভার ওয়াশ অর্থাৎ বার বার ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া, ভুলভাল প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই, ময়েশ্চারাইজিং না করা এগুলো কিন্তু অয়েলিনেসের পরোক্ষ কারণ।
প্রথমে সকালে ঘুম থেকে উঠেই আপনার মুখের স্কিন হাত দিয়ে ধরুন ও আয়নায় আপনার স্কিন দেখুন। তৈলাক্ত ত্বক বোঝার সবথেকে ভালো উপায় এটি। যদি পুরো মুখটা আপনার তেলতেলে লাগে, তবে বুঝবেন আপনার স্কিন টাইপ অয়েলি। মুখ ধোয়ার কিছু সময় পরেই আবার তৈলাক্ত হয়ে যাওয়া, এনলার্জ পোর বোঝা যাওয়া, চকচকে এবং পিচ্ছিল একটা ভাব থাকা এগুলোও অয়েলি স্কিনের বৈশিষ্ট্য।
চলুন জেনে নেই ত্বকের যত্নে কিছু কার্যকরি উপাদান সম্পর্কে।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড হল এক প্রকার বিএইচএ (BHA) বা বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড। অনেকেই জানেন, এই উপাদানটি আমাদের ব্রণ দূর করতে বেশ সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি আমাদের ত্বকের ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস রিমুভ করে পোর ক্লিন রাখে। ত্বক এর সেবাম ক্ষরণকে মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ করে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন কমিয়ে ফেলে। স্কিনকে সুস্থ রাখে।
টি ট্রি অয়েলকে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল (Anti-bacterial) এবং ন্যাচারাল অ্যান্টি-সেফটিক (Anti-Septic) বলা হয়ে থাকে। স্কিন ব্লেমিশ, একনে, ফাঙ্গাল ইনফেকশন অর্থাৎ অয়েলি স্কিনে যে ধরণের সসমস্যাগুলো দেখা যায়, সেগুলো কমিয়ে আনতে টি ট্রি অয়েল দারুণ কাজ করে।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে এই উপাদানটি বেশি কার্যকর। গ্লাইকলিক অ্যাসিড হচ্ছে এক প্রকার আলফা হাইড্রক্সি এসিড (Alpha hydroxy acid)। এটা স্কিনের মধ্যে বিদ্যমান অতিরিক্ত তেল ও শাইনি ভাব কমাতে সাহায্য করে। সেই সাথে ত্বকের পোর বন্ধ হয়ে যাওয়া রোধ করে এবং যথাক্রমে ব্রেকআউট থেকে রক্ষা করে। গ্লাইকলিক অ্যাসিড স্কিনের টেক্সচার সুন্দর রাখে, যার কারণে স্কিন বেশ ফ্ললেস দেখায়।
হায়ালুরনিক অ্যাসিড স্কিনের গভীর থেকে কাজ করে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা দমিয়ে রাখতে বেশ সাহায্য করে রাখে। কারণ হাইড্রেশন লেভেল ঠিক না থাকলে স্কিনে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গ্রিন টি তে বিদ্যমান রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও স্কিনের জন্য উপকারী পলিফেনল। যেটা ব্রণ এবং আমাদের তৈলাক্ত ত্বকের জন্য খুব ভালো কাজ করে থাকে।যেকোনো ধরণের ব্যাকটেরিয়াল গ্রোথ ও হরমোনাল একনে কমানোর জন্য গ্রিন টি অত্যন্ত কার্যকরী একট উপাদান।
স্কিন কেয়ারে বহুল ব্যবহৃত একটি হারবাল উপাদান হচ্ছে অ্যালোভেরা। এটা যেকোনো ধরণের স্কিনের সাথে খুব দ্রুত মিশে যায় এবং সার্ফেস লেয়ারে (Surface Layer) ময়েশ্চার ধরে রাখতে বেশ সাহায্য করে। অ্যালোভেরাতে বিদ্যমান রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল প্রোপারটিজ যা র্যাশ ও ব্রণের প্রকোপ কমাতে অনেকটাই সাহায্য করে। এছাড়াও এটা স্কিনের মধ্যে বিদ্যমান এক্সট্রা অয়েল শোষণ করে আমাদের রোমকূপ পরিষ্কার রাখে। তাই যেকোনো
ধরণের অয়েলি স্কিনের জন্য অ্যালোভেরা খুব ভালো কাজ করে।
খুব সিম্পল ও বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন অনুসরণ করে তৈলাক্ত ত্বককে খুব সুন্দর রাখা যায়! এক্ষেত্রে উপাদান ও ফর্মুলা দেখে পন্য নির্ধারণ করবেন। তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে এই স্টেপগুলো অনুসরণ করতে হবে।
লো পি-এইচযুক্ত, নন কমেডোজেনিক (non-comedogenic) জেল বা ওয়াটার বেজড ফেইসওয়াশ দিয়ে সবসময় মুখ ক্লিন করুন। আমাদের যাদের স্কিন অয়েলি রয়েছে তাদের বার বার মুখ ধোয়ার স্বভাব আছে। এতে ত্বকের উপরিভাগ ড্রাই ফিল হয় কিন্তু সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড (Sebasiase Gland) আরও সেবাম উৎপন্ন করে ব্যালেন্স আনার চেষ্টা করে। তাই কখনো বেশি ফেস ওয়াশ করবেন না । মর্নিং ও নাইট স্কিন কেয়ারে একবার করেই ক্লেনজিং করাই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
পোর ক্লিন করার পাশাপাশি আপনার পোর মিনিমাইজ করাটাও ভীষণ জরুরি। তাই সপ্তাহে অন্তত তিন বা চার দিন মুখে আইস ম্যাসাজ করে নিন। যাদের তৈলাক্ত ত্বক রয়েছে তাদের তৈলাক্ত ত্বক ভালো রাখার জন্য এই সহজ উপায়টি কিন্তু বেশ কার্যকরী।
মোটামুটি অ্যালকোহল ফ্রি, ন্যাচারাল এক্সট্রাক্টযুক্ত বা অয়েলি স্কিনের জন্য বেনিফিসিয়াল উপাদান আছে, এমন টোনার আপনাকে স্কিনের জন্য সিলেক্ট করতে হবে। টোনার স্কিনের পি এইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখে, স্কিনের তৈলাক্ততা কমাতে সাহায্য করে ও স্কিনকে নিষ্প্রাণ হত্ব যাওয়া থেকে রক্ষা করে। তাই মুখ পরিষ্কার করার পর অবশ্যই টোনিং করতে ভুলবেন না।
এবার আসছে ময়েশ্চারাইজিং এর পালা। ম্যাট ফিনিশিং লুকের জন্য তাই অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার নিতে হবে। সবসময় ক্রিমি ও থিক ফর্মুলার ময়েশ্চারাইজার এড়িয়ে চলবেন। জেল বেসড প্রোডাক্ট বেছে নিলেই পোর ক্লগড না হয়ে যায়। অনেক কারনেই স্কিনের ময়েশ্চার বেশ ড্যামেজ হয়ে যায়। আর তখনই অয়েল প্রোডাকশন বেড়ে যাওয়ার বেশ সম্ভাবনা থাকে। তাই ঠিকঠাক ময়েশ্চারাইজার বেছে নেওয়া খুবই এবং জরুরি!
সানস্ক্রিন সব ধরণের স্কিনের জন্য ব্যবহার করা উচিত। তবে যেহেতু অয়েলি ত্বকে ঘাম বেশি হয়, রোদে গেলে তাড়াতাড়ি অক্সিডাইজড হয়ে অনেকটা কালচে ভাব দেখায়। স্কিন আরও বেশি তেলতেলে হয়ে যাবে এই ভয়ের কারণে অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে চায় না কিংবা এড়িয়ে চলেন! এতে কিন্তু আপনার স্কিনের ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। তাই যাদের ওয়েলি স্কিন রয়েছে তাদের জেল বেসড (Gel based), অয়েল ফ্রী, ম্যাটিফাই ইফেক্ট (Mattify effect) দেয় ও লাইট ওয়েট ফর্মুলার সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
সাপ্তাহিক স্কিন কেয়ার রুটিনে আপনাকে অবশ্যই ফেইস মাস্ক বা প্যাক রাখতে হবে। রেডিমেড মাস্ক বা প্যাক ইউজ করতে চাইলে আপনার স্কিনের অয়েল কন্ট্রোল করবে এমন উপাদান আছে কি না সেটা দেখে নিতে হবে। যেমন- মুলতানি মাটি, অ্যাকটিভেটেড চারকোল (Activity charcoal), চন্দনের গুঁড়া, টি ট্রি অয়েল, গ্রিন টি ইত্যাদি। চাইলে বাসায় লেবু, শসা, চালের গুঁড়ো, বেসন, ডিমের সাদা অংশ ইত্যাদি দিয়ে একটি ফেইস প্যাক বানিয়ে নিতে পারেন। এগুলো অয়েল কন্ট্রোলে খুব ভালো কাজ করে এবং আপনার স্কিনের ওয়েলি ভাব কমাতে সাহায্য করবে।
আপনার যদি শুরু থেকে বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন যদি ঠিক থাকে তাহলে বিশ বছর বয়সের পর থেকে সিরাম অ্যাপ্লাই করতে পারেন আপনার ত্বকে । বিভিন্ন স্কিন সমস্যাকে টার্গেট করে কিংবা স্কিনের আলাদা আলাদা ধরণ নির্বাচন করে সিরাম সাজেস্ট করা হয়। যেমন- ত্বকের ফার্মনেস (Firmness) ঠিক রাখতে অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ারে পেপটাইড সিরাম (Peptide Serum), রেটিনল (Retinol), অ্যাসকরবিক এসিড (Ascorbic acid) ভিটামিন সি ইত্যাদি ব্যবহার করা শুরু করতে পারেন। যাদের ওপেন পোরের প্রবলেম আছে তাদের জন্য নিয়াসিনামাইড (Niacinamide), ব্রণের সমস্যা থাকলে স্যালিসাইলিক এসিড (Salicylic acid) ইত্যাদি। তবে সপ্তাহে এক দিনই আপনি সিরাজ ইউজ করতে পারবেন এবং একই দিনে দুই বা ততোধিক সিরাম লাগানো পারবেন না । সিরাম ইউজ করলে সান প্রোটেকশন কিংবা সানস্ক্রিণ ব্যবহার করতে হবে কেননা এগুলো বেশ সেনসিটিভ হয়।
আশা করছি, তৈলাক্ত ত্বক নিয়ে আপনাদের সকল জিজ্ঞাসা সমাধান দিতে পেরেছি। মনে রাখবেন ত্বককে সুস্থ রাখতে হলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, অয়েলি বা ফার্স্টফুড খাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখুন একটি পরিপূর্ণ স্কিন কেয়ার রুটিন শুরু করে দিন। ব্যস্ততার অজুহাতে কিংবা নামান কাজে আমরা অনেকেই আমাদের নিজের যত্ন নেই না। কিন্তু স্কিনকে সুন্দর রাখার ক্ষেত্রে নিজের কনফিডেন্স লেভেল আরও বাড়ানোর জন্য এইটুকু সচেতন তো থাকতে হবেই।
আপনি চাইলে আপনার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টগুলো কিনতে পারেন আমাদের ওয়েবসাইট থেকে । তার আর দেরি না করে আজই ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাটটি।
ওয়েবসাইট লিংকঃ
মজাদার চকলেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ে নিন আজকের আর্টিকেলটি।
মজাদার চকলেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ে নিন আজকের আর্টিকেলটি।
মজাদার চকলেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ে নিন আজকের আর্টিকেলটি।
শীতের উপযোগী একটি ফেইসওয়াশ সম্পর্কে জানতে পড়ে নিন আজকের আর্টিকেল।
শীতের উপযোগী একটি ফেইসওয়াশ সম্পর্কে জানতে পড়ে নিন আজকের আর্টিকেল।
শীতের উপযোগী একটি ফেইসওয়াশ সম্পর্কে জানতে পড়ে নিন আজকের আর্টিকেল।
শীতের উপযোগী একটি ফেইসওয়াশ সম্পর্কে জানতে পড়ে নিন আজকের আর্টিকেল।
কোরিয়ান ব্র্যান্ডের জনপ্রিয় লোশান সম্পর্কে জানতে চাইলে পড়ে নিন আজকের আর্টিকেলটি।
কোরিয়ান ব্র্যান্ডের জনপ্রিয় লোশান সম্পর্কে জানতে চাইলে পড়ে নিন আজকের আর্টিকেলটি।
কোরিয়ান ব্র্যান্ডের জনপ্রিয় লোশান সম্পর্কে জানতে চাইলে পড়ে নিন আজকের আর্টিকেলটি।
কোরিয়ান ব্র্যান্ডের জনপ্রিয় লোশান সম্পর্কে জানতে চাইলে পড়ে নিন আজকের আর্টিকেলটি।
আপনার স্কিনের জন্য কোন ধরণের এসেন্স উপযুক্ত তা জানতে চোখ রাখুন আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে।
আপনার স্কিনের জন্য কোন ধরণের এসেন্স উপযুক্ত তা জানতে চোখ রাখুন আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে।
আপনার স্কিনের জন্য কোন ধরণের এসেন্স উপযুক্ত তা জানতে চোখ রাখুন আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে।
আপনার স্কিনের জন্য কোন ধরণের এসেন্স উপযুক্ত তা জানতে চোখ রাখুন আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে।